এই যে প্রজেক্ট সেকেন্ড হোম! এই দারুন উদ্যোগের পেছনের স্বপ্নবাজ মেয়েটার গল্প। গল্প বলার আগে একটা প্রশ্ন করি। আচ্ছা! আপনার বয়স কত? ২৪/২৫ বছর কিংবা এর উপরে? তাহলে এই বয়সে আপনি কি করছেন বা করেছিলেন? হয়তো সবে মাত্র স্নাতক শেষ করে বিসিএস পরিক্ষার জন্য তুমুল প্রস্তুতি, রাত জেগে পড়াশুনা, অযথা সময় পার, বন্ধুর সাথে ‘জীবন হতাশাময়’ সূচক বিষয়ে আলাপ কিংবা কোন প্রাইভেট কোম্পানিতে ইন্টার্ন হিসেবে জব ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকেই অনেক ভালো কিছুও অর্জন করেছেন। আজ তাঁদের কথা বলবনা; কেননা আজ ব্যর্থ মানুষদের সাথে কথা হবে। আজ সেইসব ভেঙে পরা মানুষদের শোনাবো ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। উত্তরবঙ্গে থেকে উঠে আসা এক স্বপ্নবাজ মেয়ের গল্প, যেকিনা দেশের আবাসন খাতে সর্বাধুনিক ডর্ম(ডরমিটরি) সুবিধাকে পার্মানেন্ট লিভিং কনছেপ্টের সাথে মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাষ্ট্রের তালিকায় আমাদের চিরচেনা এই ঢাকা’র অবস্থান কত জানেন? ভাবছেন নিম্ন আয়ের এই দেশে ঢাকা হয়তো এতটাও ব্যয়বহুল না। তবে যারা এমনটি ভাবছেন, তাঁরা একদম ভুল। ঢাকার বাইরে থেকে যারা ঢাকায় আসে এমন নাগরিকদের ব্যয়ের দিক দিয়ে ঢাকার অবস্থান ৪০ তম। যেটা কিনা আমেরিকার অন্টারিও, দুবাই, স্পেনের মাদ্রিদ, কানাডার টরেন্টোর থেকেও বেশী। এর মানে ঢাকায় এসব শহরের তুলনায় একরাত থাকতে এবং খেতে আপনাকে অধিক টাকা গুণতে হবে। দেশের যাবতীয় কিছুর কেন্দ্রবিন্দু এই ঢাকা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঢাকা পারি জমাচ্ছে উন্নত জীবনযাপন, পড়াশুনা, চিকিৎসা, বিভিন্ন অফিসে-আদালতে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেসহ বহু ধরনের কাজে। একবার চিন্তা করুন, বিরাট এই জনগোষ্ঠী যে প্রতিদিন ঢাকায় অতিরিক্ত আসছে! এই বিরাট জনগোষ্ঠীর অনুপাতে তাঁরা ঠিকমত আবাসন সুবিধা পাচ্ছে কিনা বা পেলেও তা মানসম্মত কিনা! আসলে উত্তর হলো না। এই শহরে যেমন জীবিকার জন্য রীতিমত যুদ্ধে নামতে হয় তেমনি আবাসন সমস্যার সাথেও যুদ্ধ করতে হয়ে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা একটা মেয়ে জানে এই শহরে নিরাপত্তার কতটা অভাব! এই একটা মাত্র কারণে অঙ্কুরে বিনষ্ট হয় হাজার হাজার স্বপ্ন। বাবা-মা কিংবা অভিভাবক জানেন এই নিরাপত্তার অভাবের কথা, তাঁরাও সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আর ঢাকাতে পাঠান না তাঁদের সন্তানদের। ছেলে-মেয়ে কোথায় থাকবে, কি খাবে, কাদের সাথে থাকবে, বিপদ-আপদে কে দেখবে! এমন হাজারটা প্রশ্নের সামনে উচ্চশিক্ষা কিংবা কোন বড় হওয়ার লালিত স্বপ্ন হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে। মূলত উচ্চশিক্ষা এবং নিজের লালিত স্বপ্ন বুকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন উত্তরবঙ্গের মেয়ে সুমনা শারমিন। সবাই যেমন বুকবাঁধা স্বপ্ন আর বড় হওয়ার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে আসে এই স্বপ্নের নগরীতে, তিনিও এসেছিলেন সেগুলা নিয়ে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু ঐ যে, সমস্যার কথা বলছিলাম। উনি নিজেও এই সমস্যা ফেস করতেন আর লক্ষ্য করলেন, উনি একা এই সমস্যা ফেস করছেন না। উনার মত প্রায় বেশীরভাগই একই সমস্যা ফেস করছেন। ব্যাস! যেখানে হয়তো অন্য কেউ হলে আবার ফিরে যেত নিজের শহরে, নিজের পরিবারের কাছে। উনি তা না করে এই সমস্যাটাকে মোকাবেলা করলেন এবং চমৎকার একটি পদ্ধতিও বের করে ফেললেন। কি পদ্ধতি? বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পার্মানেন্ট লিভিং ডরমিটরি কনসেপ্ট ফর ব্যাচেলর! তবে অবশ্যই শুরুটা এতটা সহজ ছিলনা। ব্যারিস্টারি পড়ুয়া একটা মেয়ের পড়াশুনা রানিং থাকা অবস্থায় বিজনেস করাটা আসলেই সহজ হবার কথাও নয়। এছাড়াও মেয়েদেরকে আমাদের দেশে উদ্যোক্তারুপে দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননা এমন মানুষেরও অভাব নেই। সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের জাতির সবচেয়ে সাধারণ স্বভাব ‘ একজনকে উপরে উঠা দেখলে টেনে নিচে নামানোর’ স্বভাবটার কারণে অনেক ঝড়-ঝাপটা পার করে এতটা পথ আসতে হয়েছে। এরই মাঝে সবকিছু কাটিয়ে উঠে যখন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় তখন বিশ্বজুড়ে আর্বিভাব হলো মহামারী ‘করোনার’। বিশ্বের সব আবাসন খাতকে অনেকটা পথে বসিয়ে ছেড়েছে এই করোনা। কিন্তু এই সাহসী মেয়েটি করোনার মধ্যে কি করেছিলো জানেন? করোনার চিকিৎসার সাথে জড়িত চিকিৎসকেরা নিজেদের বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে যখন অনেকটা বিতাড়িত হতে শুরু করলেন, তখন এই সাহসী মেয়ে তাঁর ডরমিটরিতে ডাক্তারদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, আইসোলেটেড রুম দিয়েছে, কোরবানির ব্যবস্থা করেছে তাও আবার একদম বিনামূল্যে। ডাক্তারেরা সামাজিক যোদ্ধা। করোনায় তাঁরা ছিলেন আমাদের পক্ষ থেকে লড়া সবচেয়ে বড় সৈনিক। হঠাৎ অসুস্থ হওয়া অভিভাবকহীন কোন গেস্টকে মাঝ রাতে হাসপাতালে নেওয়া, পারিবারিক অত্যাচারের স্বীকার কোন নারীকে কাজের ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী করে দেয়া, অসহায় ক্যাপাবল কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের কাউকে চাকরীর ব্যবস্থা করা, ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসড কোন নারী কিংবা সুইসাডিয়াল কাউকে বাঁচানো এবং তাঁকে নতুন করে স্বপ্ন দেখানো, পথশিশুর পাশে সমবসময় দেখেছি সুমনা শারমিনকে।